জাতীয়
১৭৬০ মামলায় মাত্র ৫৫ চার্জশিট, নির্দোষ হিসেবে দায়মুক্তি ১৩৬ জনের

সংগৃহীত
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের হওয়া ১ হাজার ৭৬০ মামলার মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৫৫টিতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। এর বাইরে বাকি সব মামলাই এখনো তদন্তাধীন। তবে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩-এ ধারা অনুযায়ী, ইতোমধ্যে ১৩৬ জনকে অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি দিয়েছে আদালত। পুলিশের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এসব আসামিকে নির্দোষ বলে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরও ২৩৬ জনের আবেদন পুলিশ বিবেচনা করছে।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে পুলিশ সদর দপ্তরে শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা–সংক্রান্ত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম।
আইজিপি জানান, মোট ১ হাজার ৭৬০ মামলার মধ্যে হত্যা মামলা রয়েছে ৭৬৬টি। বাকি ৯৭৪টি বিভিন্ন ধারার মামলা।
চার্জশিট দেওয়া ৫৫ মামলার মধ্যে ১৮টি হত্যা মামলা, যাতে ১ হাজার ৯৪১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অন্য ৩৭টি মামলায় আসামির সংখ্যা ২ হাজার ১৮৫ জন।
হত্যা মামলাগুলো দেওয়া হয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, শেরপুর, ফেনী, চাঁদপুর, নোয়াখালী, পাবনা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহী মেট্রোপলিটন এলাকায়। অন্য মামলাগুলো চার্জশিট হয়েছে বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, নরসিংদী ও বরগুনায়।
আইজিপি বলেন, আইনের নতুন সংযোজন ১৭৩-এ ধারার আওতায় নির্দোষ ও নিরীহ ব্যক্তিরা আদালতের কাছে অব্যাহতির আবেদন করতে পারেন। ইতোমধ্যে ১৩৬ জনকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে। আরও ২৩৬ জনের আবেদন আমরা বিবেচনা করছি। তিনি আরও বলেন, চার্জশিট দিতে দীর্ঘ সময় লাগে। তাই নিরীহ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য এই বিধান রাখা হয়েছে।
এখনো নানাভাবে মামলা করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং টার্গেট করে হয়রানিমূলক মামলাও করা হচ্ছে। থানা পুলিশ বাণিজ্য করছে।
মাঠ পুলিশ বাদীদের সঙ্গে যোগসাজশে আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদেরকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ ও অর্থ বাণিজ্য করছে। বিএনপি নেতাকে যুবলীগ নেতা বানিয়ে মামলা দর ঘটনাও আছে। ধরনের ঘটনায় জড়িত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন কিনা? এখন যে মামলাগুলো হচ্ছে এই মামলাগুলো নেওয়ার আগে আরো ভালোভাবে যাচাই বাছাই করা দরকার কিনা?
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আইনত আমাদের যাচাই বাছাই কোন সুযোগ নাই৷ আইন আমাদেরকে সেই অধিকার দেয়নি তবে বর্তমান সরকার সিআরপিসির কিছু সংশোধন চেষ্টা করছেন। যেখানে মামলার আগে যাচাই বাছাই ক্ষমতা দেওয়া যায় কিনা সেটা দেখা হচ্ছে।
আইজিপি বলেন, তবে মিথ্যা মামলা অথবা নিরীহ লোককে মামলায় আসামি করা এটার জন্য কিন্তু একটা রিলিফ এই সরকার অলরেডি ঘোষণা করেছেন।
মামলা বাণিজ্য ও হয়রানর ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের সংশ্লেষ সম্পর্কে আইজিপি বলেন, স্পেসিফিকালি পুলিশের লোক যদি জড়িত থাকে, থাকতে পারে। আমি অস্বীকার করি না। ভালো মন্দ মিলেই তো আমরা সবাই। আমরা সবাই ফেরেশতা না। অবশ্যই আমার নলেজে যদি কোনোভাবে আসে আমরা এটার বিরুদ্ধে একেবারে যথাসম্ভব শক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, এমনিতে সাধারণ লোকের করা মামলাতেই মানুষ অতিষ্ঠ। সেখানে পুলিশও যদি এই ইয়েতে দলে ঢুকে যায় তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
আরেক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, প্রশ্ন একটা আসছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় অনেক ইনোসেন্ট লোক আসামি হয়েছে। এইটার ব্যাপারে যাতে কোন নির্দোষ লোক যাতে সমস্যায় না পড়ে এটার ব্যাপারে পুলিশ হেডকোয়ার্টার অত্যন্ত সতর্ক আছে এবং আইজিপি মহোদয় প্রতিনিয়ত সমন্বয় কমিটির মাধ্যমে এই পর্যায়ে মামলাগুলোর আপডেট নেন এবং উনার সঠিক নির্দেশনা যেকোনো বিনিময় লোক যেন এই মামলাগুলো তারা হারাস না হয়।
তিনি বলেন, কোনো ওসি যদি অসহায় বোধ করেন তাহলে সিনিয়র অফিসারদের জানান অথবা অ্যাটলিস্ট পুলিশ হেডকোয়ার্টারসে পর্যন্ত জানাক। যদি উনার এই অসহায়ত্ব বিষয়টা আমাদের নলেজে আসলে কিন্তু আমরা ব্যবস্থা নেবো। দরকার হলে প্রেশার কমিয়ে অন্য আরেকটা সংস্থায় মামলা দিয়ে দিতে পারি।
বৈষম্যবিরোধী মামলার ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ আপনাদের কাছে আছে কিনা এবং এ পর্যন্ত কতজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আমাদের আছে ওইভাবে ইনভলভ হয়েছে আমাদের কাছে সরাসরি আসে নাই। তবে আমরা জানি ডিএমপিতে কিছু ওসি বদলি হয়েছে, সাব ইন্সপেক্টরদেরকে সরিয়ে দিয়েছে। প্রত্যেক ইউনিটেই তারা কিন্তু তাদের ও ক্যাপাসিটিতে এটা করেছে। আমাদের কাছে ওইভাবে ওই রিপোর্টটা ওরকম করেনি। এটাকে নরমাল ডে টু ডে অ্যাক্টিভিটিজ হিসেবেই তারা এগুলো করেছে। এগুলো কিন্তু আমাদের আমরা যতদূর জানি আমাদের সব লেভেলেরই যারা প্রধানরা এ ব্যাপারে সোচ্চার আছেন।
পুলিশের কাছে মামলা দিতে গেলে বলে যে একটা অভিযোগ দিয়ে যান। সেই অভিযোগটা থানায় কাগজে রেকর্ডে এন্ট্রি হয় না। সেই কাগজটা হাতে দেওয়া হয়। একজন ইন্সপেক্টরকে আপনি দেখে এসে জানাবেন এটা ১৫ দিন ১০ দিন ২০ দিন হয়ে যায় পরে ওই কাগজটা বাস্কেটে যায় ওই লোক আর খোঁজখবর করে না। এখন এই যে মামলা রেকর্ড না করে অভিযোগ নিচ্ছেন এবং সেই অভিযোগ তদন্তের নামে সময়ক্ষেপণ করছেন এই ক্ষমতাটা বাংলাদেশের প্রচলিত কোনো আইনে ওসিকে দেওয়া হয়েছে? জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, এটা দেওয়া হয়নি। এটা অন্যায়। এরকম হয়ে থাকলে আমরা জানলে আমরা ব্যবস্থা নিবো। এরকম বেশ কয়েকটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলায় করেছি, এই অভিযোগে যে, উনি অভিযোগ পেয়ে সেটা মামলা না করে প্রাথমিক অনুসন্ধানের জন্য সাব ইন্সপেক্টরকে দিয়ে দিয়েছেন।
সরকার ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১৭৩ ধারার সাথে সংযোজন করে ১৭৩ এর-এ নামে আরেকটা ধারা আইন মন্ত্রণালয় থেকে দেওয়া হয়েছে, প্রণয়ন করা হয়েছে এবং এই ধারা অনুযায়ী যারা নিজেকে নির্দোষ, নিরীহ মনে করেন উনাদেরকে সংশ্লিষ্ট জেলার পুলিশ সুপার নির্দোষ হিসেবে রিপোর্ট দিয়ে আদালতে প্রতিবেদন পাঠাতে পারেন এবং আদালত সেটা গ্রহণ করে তাকে মামলার দায় থেকে মুক্তি দিতে পারেন, চার্জশিটের অনেক আগেই। একটা চার্জশিট হতে আপনারা দেখেছেন এক বছরে মাত্র আমরা ৫৫টা দিতে পেরেছি, এখন বাকি সব মামলার চার্জশিট দিতে কত বছর লাগে আল্লাহই জানে। সেজন্য নিরীহ নির্দোষদের হয়রানি থেকে বাঁচানোর জন্য এই বিধানটা সরকার করেছেন। এখন যে কেউ ইচ্ছা করলে আবেদন করতে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করতে পারেন যে, আমি জড়িত ছিলাম না। সমস্ত বিষয় বিচার-বিবেচনা করে দায় থেকে মুক্তি দিয়ে এসপি তাদের এই কেসগুলো আলাদা করে বিবেচনা করে আদালতে ইন্টারিম রিপোর্ট দিতে পারেন ইন্টার ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট বা অন্তর্বর্তীকালে ইনভেস্টিগেশন রিপোর্ট পাঠাতে পারেন এবং আদালত সেটা গ্রহণ করে এদেরকে দায় মুক্তি দিয়ে দিতে পারেন।
কাজেই আপনাদের মাধ্যমে যারা নিরীহ নির্দোষ তাদের প্রতি আমার আবেদন, সবাই আবেদন করুন, আমরা তাদের এই কেসগুলো ১৭৩ এর-এ অনুযায়ী বিবেচনা করে আদালতে পাঠিয়ে দেবো। যাতে তারা এই হয়রানি এই মুহূর্ত থেকেই তারা এই হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে পারেন।







